মানহার আজ তেইশ মাস হলো।মাশাআল্লাহ সে এখন মোটামুটি সব বুঝে।ওর আচরণ গুলো বড় মানুষের মতো।আমি মাঝেমধ্যে অবাক হই।সব বাচ্চারা কি এমন হয় নাকি ওর বুঝার ক্ষমতা একটু বেশি, সেটা আমি বুঝি না।কারণ আমার অভিজ্ঞতা নেই এই ব্যাপারে।
যাইহোক কথাবার্তা চলনবলন নিয়ে আজ লিখতে বসেছি।প্রথমে গতকালের দুইটা ঘটনা বলি। আমি দুপুরের রান্না করছিলাম। একটা ফোন এলো।আমার কথা শুনে সে বুঝতে পেরেছে নিচে যাবো।ফোন রেখে ঘরে যাবো, চাবি আনতে চেয়ে দেখি চাবি আর ওর ডলোকে নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।ওর পুতুলের নাম ডলো।
নিচে গেলাম অনলাইনে আমার জামা অর্ডার ছিলো এটা দিয়ে গেলো।নিয়েবাসায় ঢুকার সাথে সাথে বলছে আম্মাম তুলো তুলো মানে খুলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম এতে কি আছে বলে মানুর নামা(জামা)।আমি কিছু না বলে খুললাম।সে দেখে বলে উঠলো ও এটা আম্মামের নামা(জামা)।এরপর আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি রাগ করেছো।সে সাথে সাথে যেভাবে উত্তর দিলো আমি আশ্চর্য হলাম।সে বলে না সুন্নর(সুন্দর)।
এরপর ওর বাবা আসলো সন্ধ্যায়।ওর বাবা আমার জামা গুলো অর্ডার করেছে বাসায় পড়ার জন্য কিন্তু জামা দেখে আমার মনে হলো এগুলো বাসায় পড়বো কেনো হিজাব কিনে নিলে বাইরে ও যাওয়া যাবে।ওর বাবাকে পড়ে দেখাচ্ছিলাম।
ওর বাবা তখন আমাকে বলছিলো মসজিদ, লালাপর্ট এসব জায়গায় যেতে পারবা।এটা সে শুনেছে আবার বিষয়টা বুঝেছে।আমি যখন জামা পরিবর্তন করবো সে নিষেধ করে।আমি ভাবলাম ওকে বুঝিয়ে বলি আমরা বাইরে গেলে পড়বো।সে সাথে সাথে বলে উঠলো মুচজিদে যাবা,লালাপতে যাবা।লালাপত এতো সুন্দর করে বলতেছে আমি আর ওর বাবা তো হেসে কুটিকুটি।
ওর বাবা ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলছিলো আচ্ছা আজ তোমাকে আমি কোলে নিয়ে গান গেয়ে ঘুম পাড়াবো।এরপর আমরা যথারীতি রাতের খাবার খেলাম,খাবারের পর মানহা অনেকক্ষণ খেলাধুলা করলো।এরমধ্যে ওর বাবা শুয়ে পড়েছে। আমরা যখন শুতে যাবো সে তো আর শুবে না।আমি বুঝাচ্ছি একটা বেজে যাচ্ছে আসো আমরা ঘুমাবো।সে খাটে ওঠে বাবার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা ঘুমিয়ে গেছে। আমি ওর সাথে কথা বলছি ওর বাবা তখন পাশ ফিরতে ফিরতে বললো মা ঘুমাবানা।
সাথে সাথে সে বলে উঠলো বাবা কোলে।ওর উচ্ছাস কে দেখে।ও বাবা তখন ওঠে গেলো।কোলে নিয়ে গজল গেয়ে ঘুম পাড়ালো।বাবা সন্ধ্যায় বলে ছিলো সেটা সে মনে রেখে বসে আছে।ও সব কথা বলবে।কিন্তু বয়স অনুসারে সব কথা বলার মতো জিহ্বা এতো ঘুরে না।
এটার জন্য সে নিজের মতো সব ঠিক করে নেয়।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওর ভাষা সকলের বোধগম্য করতে হলে একটা ডিকশনারী বানাতে হবে।ওর শব্দ ভান্ডারের কিছু কিছু দিয়ে দিলাম। আসলে ওর মুখে এসব শব্দ শুনলে আমার মনে হয় বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর, সুমধুর শব্দ ভান্ডার। ও চিংড়ি খেতে খুব ভালোবাসে।এটা মনে হয় পেঠ থেকে শিখে এসেছে।আমাকে ওর বাবা চিংড়ি খাওয়ার পোকা বলে।আমাকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে চিংগি আছে...?
আছে একটু লম্বা করে বলে।মানু থাবে।মানে হচ্ছে মানহা খাবে।মাছকে বলে মান,মাংসকে মাংকো, গোসলকে গগ।মানু তেলে। মানে মানু খেলা করে।
এসব যাইহোক মানা যায় কিন্তু সে যখন আমার কাছে শুনে শুনে বিসমিল্লাহ শিখেছে তখনই আমার মাথায় আসলো এভাবে বললে কি হবে কি না হবে।সে কোন কিছু খাইতে গেলে বলে বিয়য়া, পড়তে গেলে বলে বিয়য়া।আজ দুপুরে শুনি উচ্চস্বরে বলছে আল্লাহ হব্বাব,আল্লাহ হব্বাব,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-------।আমি জিজ্ঞেস করলাম কি করো? বলে আনান,আনান মানে আযান দিচ্ছে। ওর কত গুলো ডলো(ডল) আছে। কতক্ষন আগে দেখি সব গুলো কে এক লাইনে দাঁড় করিয়েছে।এরপর বলা শুরু করেছে।সবাত নামাজ পয়ো।তাকবির আল্লাহ হব্বাব।
সিজদা সিজদা বলে ওদের ধরে সিজদাহ্ দেওয়ায় আবার জোরে জোরে বলে আল্লাহ হব্বাব।ও সারাদিন যত কথা বলে সব বলতে গেলে রাত শেষ হয়ে দিনও শেষ হবে।তাই আজকের মতো এখানেই বিরতি নিলাম।
