সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। এইতো সেদিন আমরা সদ্য এইচ.এস.সি. পাশ করে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম। আর আজ আমরা গ্রাজুয়েট। আমরা বি.এ পাশ করলাম। যেখানে অন্যদের লাগে ৪ বছর,আমাদের লাগলো ৫ বছরেরও বেশি। তারপরও যেন মনে হচ্ছে, এইতো সেদিন ভর্তি হলাম ঢাকা কলেজ।
ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন এবং বিখ্যাত কলেজ। এখান থেকে দেশবরণ্য অসংখ্য-অপরিচিত মুখ তাদের পড়াশুনা শেষ করেছেন। এখান থেকে ডিগ্রী অর্জন করাটা আসলেই অনেক গর্বের বিষয়।
আমরা অধিভুক্ত সাত কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে, ঢাকা কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রথম যেদিন কলেজে গেলাম,মনে হচ্ছিল এ কোথায় এলাম। একজনের বাড়ি কুড়িগ্রাম, একজনের বাড়ি খাগড়াছড়ি, আবার একজনের বাড়ি সিলেট, আরেকজনের বাড়ি সাতক্ষীরা। বলতে গেলে হয়তোবা বাংলাদেশের ৬৪ টা জেলার ই ছাত্র ভর্তি হয়েছিলাম। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম একটা জায়গায় ৬৪ টা জেলার ই বন্ধু একসাথে পাব। এটা কি ভাবা যায়!একটা ছাদের নিচে বাংলাদেশের প্রতিটা কোনা কোনার ছাত্রের সমাহার। তবে প্রথম দিনই এত বন্ধুত্ব হয়নি। সময় বেড়েছে, বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়েছে। অনেকে প্রথম দিন ছিল, আজ হয়তোবা নেই। অনেকে বিদেশে গেছে, অনেকে পারিবারিক কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। জীবন তো আর থেমে থাকবে না। জীবনের কাজই হলো বয়ে চলা।
আমি ভর্তির সময়, একটি স্লোগান দেখেছিলাম,"এসো নবীন ভয় নেই, ঢাকা কলেজে মেয়ে নেই।"বাংলাদেশে ঢাকা কলেজ একমাত্র প্রতিষ্ঠান,যেখানে কোন মেয়ে নেই। ভাবতেও পারিনা একটি মেয়েহীন কলেজে, ছেলেদের সাথেও এত আত্মার-বন্ধন হওয়া সম্ভব।
আজ আমরা সবাই গ্রাজুয়েট। কেউই জানিনা, আগামীকাল কি হবে। হয়তোবা আমরা চাকরির জন্য দৌড়াবো, অনেকে ব্যবসা করবে, অনেকে বিদেশে যাবে। তবে আমরা যে যাই করি, আমরা যে পর্যায়ে যায় না কেন, আমরা আমাদের এই জীবনটাকে ভুলতে পারবো না। পাঁচটা বছরের স্মৃতি কি ভোলা সম্ভব!
শুধু একটা জিনিসই চাই, ভবিষ্যতে যদি কখনো কারো সাথে দেখা হয়, বুকে টেনে নিয়ে বলিস,বন্ধু কেমন আছিস? এমন যাতে না হয়, দেখেও না দেখার ভান করিস।